130
মক্কা বিজিত হলো। মজলুম মানবতার মজলুম নবী মুহাম্মদ সা:, অকস্মাৎ মুখ খুললেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে কুরাইশগণ! বলো আজ তোমাদের সাথে কেমন ব্যবহার করা উচিত।’ জবাব এলো ‘মুহাম্মদ! তুমি আমাদের শরিক ভাই ও শরিক ভাতিজা।’ রাসূল সা: বললেন, ‘আজকের দিনে তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, যাও, ‘তোমরা সবাই ক্ষমা প্রাপ্ত।’
হিজরতের প্রক্কালে কুরাইশ সর্দারদের পুরস্কারের লোভে সুরকা ইবনে জাসাস মুহাম্মদ সা:-এর শিরচ্ছেদ করার জন্য তাঁর পেছনে ঘোড়া ছুটাল। সে কাছে পৌঁছে গেল। হজরত আবু বকর শঙ্কিত হলেন। রাসূল সা: দোয়া করলেন, তিনবার সুরকার ঘোড়া পা বালিতে বসে গেল।
ইসলাম গ্রহণের পর হামজাহ রা: অনেক জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন। মহানবী সা: ওহুদ যুদ্ধেও তাঁকে ইসলামী বাহিনীর পতাকা অর্পণ করেছিলেন। হামজাহ রা: ছিলেন রাসূল সা:-এর চাচা, সত্যের সাথে মিথ্যার যুদ্ধ ওহুদের ময়দানে তিনি শহীদ হয়েছিলেন। আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা নিজে হামজাহ রা:-এর পেট চিরে ফেলল, তাঁর কলিজা বের করে চিবাতে লাগল এবং তাঁর নাক ও কান কেটে গলার হার বানায়। এমন বর্বর হত্যাকাণ্ড চালানোর পরও রাসূল সা: তাঁকে ক্ষমা করে দেন।
খায়বারে ইহুদিদের শোচনীয় পরাজয়ের পর জয়নব বিনতে তাহারাত, সম্ভান্ত ইহুদি রমণী ভেড়ার গোশত রান্না করে রাসূল সা:কে দাওয়াত করেন। রাসূল সা: এবং বিশর বিন রাবা রা: খাওয়া শুরু করলেন। খাবার মুখে দিয়েই রাসূল সা: বিষক্রিয়া বুঝতে পারলেন এবং সাথে সাথে খাবার ফেলে দিলেন। বশির রা: কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছটফট করে মারা গেলেন।
An example of Muhammad’s forgiveness
An example of Muhammad’s forgiveness |
নিম্নে রাসূল সা:-এর ক্ষমা ও দয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো। তায়েফের রক্তে ভেজা মরুপথ। নবুয়তের দশম বছর। শাওয়াল মাসে নবী সা: খাদেম যায়েদ বিন হারেস রা:কে সাথে নিয়ে তায়েফ যান। রাসূল সা: তায়েফবাসীর পাশে ১০ দিন যাপন করেন।
এ সময় তিনি তাঁদের নেতৃস্থানীয়দের সাথে দ্বীনের দাওয়াত পেশ করেন। কিন্তু তারা বলল, তুমি আমাদের শহর থেকে বেরিয়ে যাও। এরপর ইতর ছেলেপেলেকে তাঁর পেছনে লেলিয়ে দিলো। অশ্লীল গালমন্দ আর চেঁচামেচি করল।
এক সময় তারা রাসূল সা:-এর ওপর পাথর মারতে শুরু করল। নবীজীর জুতা দু’টি রক্তে লাল হয়ে উঠল। যায়েদ বিন হারেস রা: তাঁকে পাথর বৃষ্টি থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে তাঁর মাথায়ও জখমের সৃষ্টি হলো।
এভাবে পাথর মারার ভেতরে দৌড়াতে দৌড়াতে তারা রবি আর দুই ছেলে উতবা ও শায়বার আঙ্গুর বাগানে আশ্রয় নিলেন। এরপর রাসূল সা: মক্কার পথ ধরলেন। তাঁর হৃদয়ে তখন হতাশার কালো মেঘ। তিনি যখন করনুল মানজিল নামক মহল্লায় পৌঁছালেন তখন জিবরাইল আ: পাহাড়ের ফেরেশতাকে নিয়ে তাঁর কাছে এলেন। বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! অনুমতি দিন! তাদেরকে আবু কুবাইস ও কুআইকিয়ান পাহাড়ের মধ্যে ফেলে এক চাপ দিয়ে শেষ করে দিই।
রাসূলে কারিম সা: শান্ত কণ্ঠে জবাব দিলেন, না! তাদেরকে মারবেন না। আমার একান্ত আশা, হয়তো আল্লাহ পাক তাদের বংশধরদের মধ্যে এমন অগণিত অসংখ্যক মানুষ পাঠাবেন, যারা একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই ইবাদত করবে। যারা তাঁর সাথে কোনো কিছুর শরিক করবে না।
(বুখারি, খণ্ড : ৪, অধ্যয় : ৫৪, হাদিস ৪৫৪)
মক্কা বিজিত হলো। মজলুম মানবতার মজলুম নবী মুহাম্মদ সা:, অকস্মাৎ মুখ খুললেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে কুরাইশগণ! বলো আজ তোমাদের সাথে কেমন ব্যবহার করা উচিত।’ জবাব এলো ‘মুহাম্মদ! তুমি আমাদের শরিক ভাই ও শরিক ভাতিজা।’ রাসূল সা: বললেন, ‘আজকের দিনে তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, যাও, ‘তোমরা সবাই ক্ষমা প্রাপ্ত।’
হিজরতের প্রক্কালে কুরাইশ সর্দারদের পুরস্কারের লোভে সুরকা ইবনে জাসাস মুহাম্মদ সা:-এর শিরচ্ছেদ করার জন্য তাঁর পেছনে ঘোড়া ছুটাল। সে কাছে পৌঁছে গেল। হজরত আবু বকর শঙ্কিত হলেন। রাসূল সা: দোয়া করলেন, তিনবার সুরকার ঘোড়া পা বালিতে বসে গেল।
মনস্তাত্তিক দিক থেকে সে দুর্বল ও ভীত হয়ে পড়ল, রাসূল সা:কে ডেকে সে প্রাণ রক্ষার জন্য আবেদন জানিয়ে বলল, যখন আপনাকে আল্লাহ কুরাইশদের ওপর বিজয় দান করবেন, তখন অনুগ্রহ করে আমাকে ক্ষমা করবেন। মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করল। রাসূল সা: তাঁকে সেদিন তার অপরাধ সম্পর্কে কোনো কিছু জিজ্ঞেস পর্যন্ত করেননি।
ইসলাম গ্রহণের পর হামজাহ রা: অনেক জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন। মহানবী সা: ওহুদ যুদ্ধেও তাঁকে ইসলামী বাহিনীর পতাকা অর্পণ করেছিলেন। হামজাহ রা: ছিলেন রাসূল সা:-এর চাচা, সত্যের সাথে মিথ্যার যুদ্ধ ওহুদের ময়দানে তিনি শহীদ হয়েছিলেন। আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা নিজে হামজাহ রা:-এর পেট চিরে ফেলল, তাঁর কলিজা বের করে চিবাতে লাগল এবং তাঁর নাক ও কান কেটে গলার হার বানায়। এমন বর্বর হত্যাকাণ্ড চালানোর পরও রাসূল সা: তাঁকে ক্ষমা করে দেন।
খায়বারে ইহুদিদের শোচনীয় পরাজয়ের পর জয়নব বিনতে তাহারাত, সম্ভান্ত ইহুদি রমণী ভেড়ার গোশত রান্না করে রাসূল সা:কে দাওয়াত করেন। রাসূল সা: এবং বিশর বিন রাবা রা: খাওয়া শুরু করলেন। খাবার মুখে দিয়েই রাসূল সা: বিষক্রিয়া বুঝতে পারলেন এবং সাথে সাথে খাবার ফেলে দিলেন। বশির রা: কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছটফট করে মারা গেলেন।
ধারণা করা হয়, এটা খুব শক্তিশালী বিষ ছিল। এ ঘটনার তিন বছর পরও রাসূল সা: মৃত্যুর সময় এ বিষয়ের তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করছিলেন। সদ্য বিজয়ী সব সাহাবি মহিলাকে গ্রেফতার করে রাসূল সা:-এর নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। নবী (সা:)-এর আদেশ পাওয়া মাত্রই হত্যার চেষ্টার অপরাধে মহিলার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে। দরদি নবী সা: মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, জয়নব! তুমি কি হত্যার জন্য এমনটি করেছ? মহিলা বলল, হ্যাঁ।
রাসূল সা: বললেন, কেন করেছ? মহিলা বলল, আপনি যদি রাজা বা বাদশাহ হন তবে এ বিষে মারা যাবেন। আমরা আপনার থেকে মুক্তি পাব। আর যদি নবী হন তবে আল্লাহ আপনাকে বিষের কথা জানিয়ে দেবেন। রাসূল সা: বললেন, আল্লাহ তোমাকে আমার ওপর বিজয়ী কিংবা আমাকে হত্যা করার শক্তি দেননি। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।
সাহাবিরা সবাই এক সাথে বলে ওঠলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা: আমরা কী তাঁকে হত্যা করব না? রাসূল সা: বললেন, না? তাঁকে ছেড়ে দাও।
দুনিয়া ও পরকালে আল্লাহর রহমত আর ক্ষমা পেতে হলে দুনিয়াতে অপরকে ক্ষমা করা, অপরের প্রতি দয়া-ইহসানের মানসিকতা থাকতে হবে। তখন মানুষ ইনসাফভিত্তিক একটি সুষ্ঠু-সুন্দর সমাজ উপহার পাওয়া যাবে।