Muhammad’s forgiveness
Muhammad’s forgiveness |
আল্লাহ ঘোষণা দিচ্ছেন,
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ
অনুবাদ : আপনি ক্ষমা করতে থাকুন আর ভালো ভালো কাজের আদেশ দিতে থাকুন। আর মূর্খদের (সঙ্গে অর্থহীন তর্ক-বিতর্ক) এড়িয়ে চলুন’ (সূরা আরাফ : আয়াত নং ১৯৯)
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
فَاعْفُوا وَاصْفَحُوا
তরজমা : তোমরা ক্ষমা করো এবং এড়িয়ে চলো’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১০৯)
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে এইভাবে- তিনি তাদেরকে বললেন,
يا معشر قريش: ما تظنون أني فاعل بكم ؟ قالوا أخ كريم، ابن أخ كريم، قال: فاذهبوا فأنتم الطلقاء،
হে কুরাইশগণ! তোমাদের সঙ্গে এখন আমার আচরণের ধরন সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কী ? তারা বলল, আপনি উদার ও ক্ষমাশীলের ভাই ও উদার ও ক্ষমাশীল ভাইয়ের ছেলে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন ‘যাও, তোমরা মুক্ত।’
আল্লাহ তায়ালা এক স্থানে আদেশ দিচ্ছেন
وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوا بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُمْ بِهِ وَلَئِنْ صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِلصَّابِرِينَ () وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَلَا تَكُ فِي ضَيْقٍ مِمَّا يَمْكُرُونَ () إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوْا وَالَّذِينَ هُمْ مُحْسِنُونَ ()
তরজমা : তোমরা যদি (কোনো জুলুমের) প্রতিশোধ নাও, তবে ঠিক ততটুকুই নেবে, যতটুকু জুলুম করেছে আর যদি ধৈর্য ধারণ করো, তাহলে জেনে নাও ধৈর্যধারণকারীরাও শ্রেয়। এবং (হে নবী! আপনি ধৈর্যধারণ করুন। কারণ আপনার ধৈর্য তো শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই। আপনি কাফের সম্প্রদায়ের জন্য দুঃখ করবেন না এবং তারা যে ষড়যন্ত্র করে তার কারণে সংকীর্ণ হয়েন না। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে যারা তাকওয়া অবলম্বন করে ও ইহসানের অধিকারী হয়’ (সূরা: নাহল, আয়াত: ১২৬/১২৭)
হাদিস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
(বুখারী শরীফ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৯৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৭৬ )
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ رَحِمَ اللهُ رَجُلاً سَمْحًا إِذَا بَاعَ وَإِذَا اشْتَرَى وَإِذَا اقْتَضَى
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি রহমত বর্ষণ করেন যে নম্রতার সাথে ক্রয়-বিক্রয় করে ও পাওনা ফিরিয়ে চায়। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯৩১ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৪৬) (বুখারী : ২০৭৬ নং হাদীস )
সুনামে তিরমিজি -২০২১ নং হাদীস রাসূল সাঃ বলেছেন –
عَنْ سَهْلِ بْنِ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ الْجُهَنِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ مَنْ كَظَمَ غَيْظًا وَهُوَ يَسْتَطِيعُ أَنْ يُنَفِّذَهُ دَعَاهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رُءُوسِ الْخَلاَئِقِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ فِي أَىِّ الْحُورِ شَاءَ ” . قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
সাহল ইবনু মুআয ইবনু আনাস আল-জুহানী (রহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক তার ক্রোধকে বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা রেখেও তা নিয়ন্ত্রণ করে- আল্লাহ তা’আলা কিয়ামত দিবসে তাকে সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে এনে জান্নাতের যে কোন হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেয়ার অধিকার দিবেন। (সুনামে তিরমিজি -২০২১ নং হাদীস)
সূরা আলে ইমরানে রয়েছে,
الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
অর্থাৎ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও, যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন, যা তৈরি করা হয়েছে
পরহেজগারদের জন্য। যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষকে ক্ষমা করে, বস্তুত আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকেই ভালোবাসেন।’ (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৪)
মানুষকে ক্ষমা করে দেওয়াটা তাকওয়ার পথকে মসৃণ করে। ক্ষমা তাকওয়ার নিকটবর্তী গুণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, وان تعفوا اقرب للتقوى‘আর ক্ষমা করে দেয়াই তাকওয়ার নিকটতম।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩৭)
সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) -৫০৭৪, আহমদ : ৫৬৩৫ ) রাসূল সাঃ বলেছেন
عن عَبْد اللَّهِ بْن عُمَرَ قال: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، كَمْ نَعْفُو عَنِ الْخَادِمِ؟ فَصَمَتَ، ثُمَّ أَعَادَ عَلَيْهِ الْكَلَامَ، فَصَمَتَ، فَلَمَّا كَانَ فِي الثَّالِثَةِ، قَالَ: اعْفُوا عَنْهُ فِي كُلِّ يَوْمٍ سَبْعِينَ مَرَّةً
তরজমা : হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, এক লোক এসে রাসূলুল্লাহকে (সা.) বললো আমাদের গোলাম কর্মচারীরা তো ভুলত্রুটি করে থাকে; তাদেরকে আমরা কতবার ক্ষমা করবো? উত্তরে রাসূল (সা.) কী না বলে চুপ রইলেন। লোকটি আমার প্রশ্ন করলো। এবারও রাসূল (সা.) চুপ রইলেন। লোকটি যখন তৃতীয়বার প্রশ্ন করলো। তখন রাসূল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
اعْفُوا عَنْهُ فِي كُلِّ يَوْمٍ سَبْعِينَ مَرَّةً
অর্থাৎ প্রতিদিন তাকে সত্তর বার মাফ করে দিবে’ (সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) -৫০৭৪, আহমদ : ৫৬৩৫ )।
এবার শুনুন রাসূলুল্লাহ এর দশ বছরের খাদেম অন্যতম সাহাবী হজরত আনাস (রা.) কী বলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর চরিত্র বিষয়ে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি দশ বছর রাহমাতুল্লিল আলামিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করেছি। তিনি কখনো আমাকে বলেননি যে, এই কাজটি কেন এভাবে করেছো বা কেন এইভাবে করোনি।’ হজরত আনাস (রাযি.) আরো বলেন, পরিবারের কেউ যদি আমাকে কখনো কিছু বলতে চাইতো নবীজি (সা.) বলতেন ওকে বলে কী হবে? তাকদিরে যা আছে তাই তো হবে। এভাবে নবীজি (সা.) সবাইকে ক্ষমা করার তালিম দিতেন।
মহান আল্লাহ রাবুল ইজ্জত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্পেশাল আদেশ দিল,
বুখারি : ৪৮৩৮ নং হাদীসে রয়েছে –
وَلَا يَدْفَعُ السَّيِّئَةَ بِالسَّيِّئَةِ وَلَكِنْ يَعْفُوْ وَيَصْفَحُ
অর্থাৎ অন্যায়ের মাধ্যমে কোনো অন্যায় বা মন্দ প্রতিহিত করো না, বরং ক্ষমা প্রদর্শন করো এবং (অন্যায়কারীকে) উপক্ষা করে যাবে’ (বুখারি : ৪৮৩৮)
মুসলিম : ২৫৮৮ নং হাদীসে বর্নিত রয়েছে –
وعن أبي هُريرة : أَنَّ رسولَ اللَّه ﷺ قَالَ: مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ، وَمَا زَادَ اللَّهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ إِلَّا عِزًّا، وَمَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ للَّهِ إِلَّا رَفَعَهُ اللَّهُ ، رواه مسلم.
অর্থাৎ ‘দানে সম্পদ কমে না, (বরং দানের মাধ্যমে আল্লাহ সম্পদ বাড়িয়ে দেয়) ক্ষমা বান্দার সম্মান বাড়িয়ে দেয়, আর আল্লাহর সন্তুষ্ঠির জন্য যে ব্যক্তি নরম আচরণ করে (নিজেকে ছোট করে) আল্লাহ তাকে উচ্চ আসন দান করে’ (মুসলিম : ২৫৮৮)
আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) বর্ণনাকরেন-
وَلاَ يَعْفُو عَبْدٌ عَنْ مَظْلَمَةٍ إِلاَّ زَادَهُ اللَّهُ بِهَا عِزًّا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
অর্থাৎ ‘যে বান্দা অত্যাচারিত হয়েও জালিমকে ক্ষমা করে দেয়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সম্মানিত করবেন’ (আহমদ : ১/১৯৩) (আহমাদ ১৬৭৪, আবূ য়্যা’লা ৮৪৯, বাযযার ১০৩২, সহীহ তারগীব ৮১৪)
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আরেকটি রেওয়ায়াতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহিষ্ণুতার মর্যাদা তুলে ধরে বলেন, ‘হযরত মুসা আ. আল্লাহ তাআলাকে জিজ্ঞেস করেন, হে রব! তোমার নিকট কোন বান্দা বেশি মহিমান্বিত? জবাবে আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ক্ষমা করে দেয়।’ -মিশকাত ২/৪৩৪
হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, একবার এক বেদুঈন মসজিদে পেশাব করে দিল। লোকেরা তা দেখে তেড়ে এল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, তাকে ছেড়ে দাও এবং এক বালতি পানি ঢেলে স্থানটি ধুয়ে দাও। মনে রেখ, তোমাদেরকে সহজ-সাধ্যকারী হিসেবে পাঠানো হয়েছে, কাঠিন্য সৃষ্টিকারী হিসেবে নয়। -বুখারী, কিতাবুল উযূ, ১/৩৫
উম্মতকে তিনি নসীহত করে বলেন, ‘যে তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার সাথে তুমি মিলে যাও, যে তোমার ওপর জুলুম করে তাকে ক্ষমা করে দাও, যে মন্দ আচরণ করে, তার সাথে সদাচরণ কর।’
হাদীস শরীফের ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা মন্দ ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা, তা জঘন্য মিথ্যা। তোমরা একে অন্যের ছিদ্রান্বেষণ করবে না, একে অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না, প্রতারণা করবে না, পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ রাখবে না, একে অন্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পাকাবে না; বরং আল্লাহর বান্দা হিসেবে সকলে ভাই ভাইয়ে পরিণত হবে। -বুখারী ২/৮৯৬
সহিষ্ণুতার কয়েকটি দৃষ্টান্ত
১. যখন মুনাফিক-সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সুলূলকে কবরে নামানো হয় তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গমন করে তাকে কবর থেকে বের করার নির্দেশ দেন। এরপর তার লাশ স্বীয় হাটুর ওপর রাখেন, মুবারক মুখের পবিত্র থুথু তার শরীরে দেন এবং নিজের পরিধেয় জামা তাকে পরিয়ে দাফন করেন। (বুখারী, কিতাবুল জানাইয ১/১৮২)
২. যায়েদ নামের এক ইয়াহুদী পাদ্রী মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাথে একটি অগ্রিম কেনা-বেচা করল। নির্ধারিত সময়ের ২/৩ দিন পূর্বেই সে এসে মাল পরিশোধের দাবি করল। এমনকি চাদর মুবারক টেনে নবীজীর সঙ্গে বেআদবী করল। বিকৃত চেহারায় রূঢ় কণ্ঠে নবীজীর দিকে তাকিয়ে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে চিনি। তোমরা আব্দুল মুত্তালিবের বংশধর, বড় টালবাহানাকারী।’ সেখানে উপস্থিত ছিলেন হযরত উমর ফারুক রা.।
নবীজীর সাথে লোকটির এ অশিষ্ট আচরণ দেখে তিনি ক্রোধান্বিত হয়ে তাকে ধমক দিলেন। কিন্তু রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুখে ছিল হাসি। তিনি উমর রা.কে বললেন, উমর! আমি ও এ ব্যক্তি তোমার থেকে অন্যরূপ আচরণ পাবার হকদার ছিলাম। দরকার তো ছিল তুমি আমাকে সত্বর তার প্রাপ্য আদায় করার পরামর্শ দিতে আর তাকে কথায় ও আচরণে নম্রতা অবলম্বনের তাগিদ দিবে।
এরপর তিনি উমর রা.কে প্রাপ্য পরিশোধের নির্দেশ দেন। এবং তাকে আরো ২০ সা বেশি দিতে বলেন, যা ছিল উমর রা. কৃর্তক লোকটিকে ধমক দেওয়ার বদলা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর এ সহিষ্ণু আচরণ লোকটির ইসলাম গ্রহণের কারণ হয়। যাওয়ার পথে যায়েদ উমর রা.কে বললেন, হে উমর! আমি হচ্ছি ইয়াহুদী-পন্ডিত যায়েদ ইবনে সানা।
আসলে লেনদেন আমার উদ্দেশ্য ছিল না, বরং মহানবীর ক্ষমা ও সহিষ্ণুতা পরীক্ষা করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। কারণ শেষ নবীর অন্যতম গুণ হবে এই যে, তাঁর ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা ক্রোধের ওপর প্রবল থাকবে, যতই রূঢ় আচরণ করা হবে তার ক্ষমা ততই বৃদ্ধি পাবে।
অতএব ওমর! আমি যা চেয়েছি তা পেয়ে গেছি। এরপর তিনি নবীজী সা. এর হাতে খালেছভাবে ঈমান আনেন এবং তাঁর অঢেল সম্পদের অর্ধেক উম্মতের জন্য দান করে দেন। -মুসনাদে আহমদ, ৩/১৫৩, আখলাকুন্নাবী পৃ. ১২৪
(দ্র. মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২২৩৭, ৬৫৪৭; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ১৩৮৯৮)
৩. নজদ-অভিমুখী এক অভিযানের সময় পথিমধ্যে দ্বিপ্রহর হলে সাহাবীগণ একটি বিস্তীর্ণ বাগানের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাবুল বৃক্ষের ছায়ায় আরাম করছিলেন। তাঁর তলোয়ার বৃক্ষের ডালে ঝুলানো ছিল।
এমন সময় এক বেদুঈন-কাফের তলোয়ারটি টেনে নামাল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জেগে দেখেন তাঁর শিয়রে এ দুশমন তরবারী হাতে দাঁড়িয়ে আছে এবং বলছে, আমার হাত থেকে তোমাকে এখন কে বাঁচাবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে ওঠেন- ‘আল্লাহ!’ একথা শুনে তার আত্মা প্রকম্পিত হয়ে ওঠল।
সে তলোয়ার কোষবন্ধ করে বসে পড়ল। নবীজী তাকে কোন শাস্তিই দিলেন না বরং ক্ষমা করে দিলেন। -বুখারী, কিতাবুল মাগাযী, ২/৫৯৩
৪. আববাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন নাজরানের চাদর পরিহিত ছিলেন। যার
প্রান্তদেশ ছিল মোটা। পথে এক বেদুঈনের সাথে দেখা হতেই সে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাদর ধরে জোরে টান দিল, যার ফলে তাঁর গলায় দাগ পড়ে গেল। এরপর সে বলল, আল্লাহর যে মাল আপনার কাছে রয়েছে তা আমাকে দেওয়ার হুকুম দিন। করুণার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকিয়ে হাসলেন এবং প্রার্থিত বস্ত্ত দেওয়ার জন্য বললেন। -বুখারী, কিতাবুল জিহাদ
নবুওয়াতের ১০ম বছর তায়েফবাসীর হাতে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাহাড়-সমূহের ফেরেশতা কর্তৃক অত্যাচারী তায়েফবাসীকে পিষে মেরে ফেলার আবেদন করা হলে তা নাকচ করে দিয়ে রহমতের নবী বলেছিলেন, আশা করি এদের বংশধরদের মধ্যে কেউ লা-শরীক আল্লাহর ইবাদাতগুজার হবে। -যাদুল মা‘আদ, ১/৩০২
যুদ্ধ-সম্রাট আবু সুফিয়ানের যখন শুভবুদ্ধির উদ্রেক হল তখন তিনিও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে আত্মসমর্পণ করলেন। নবীজী তাকে শুধু ক্ষমাই করলেন না, ঘোষণা করলেন, যারা আবু সুফিয়ানের ঘরে আশ্রয় নেবে তারাও নিরাপদ। রাসূলের এ মহানুভবতা আবু সুফিয়ানের হিংসাকে চিরতরে বিনাশ করে দেয়। তিনি খালেস মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। -আসসীরাতুন্নবিয়্যাহ পৃ. ৩৪৯; যাদুল মা‘আদ, ১/৪২১
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কাবাসীদের মাঝে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে বললেন, আজ শুধু তারাই বঞ্চিত হবে যারা নিজেরাই নিরাপত্তা লাভে ইচ্ছুক নয় এবং যারা নিজেদের জীবন নিয়ে বিতৃষ্ণ। ব্যাপক নিরাপত্তার ঘোষণা দিয়ে নবী বলেন, যে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ, যে আপন ঘরের দরজা বন্ধ করবে সে নিরাপদ, যে আবু সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে সেও নিরাপদ। -সীরাতে ইবনে হিশাম ২/৪০৯
মহানুভবতার বদৌলতেই মূলত মুসলিমবিরোধী সকল কার্যক্রমে নেতৃত্ব দান করা আবু সুফিয়ান রা., নবীজী প্রিয় চাচার সাথে পশুসুলভ আচরণ করা তার স্ত্রী হিন্দা রা., চাচার হত্যাকারী ওয়াহশী রা., আবু জেহেলের ছেলে ইকরামা রা. প্রমুখ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলামকে আঁকড়ে ধরতে উৎসাহ পেয়েছিলেন। মুসলমানদের সে সোনালী অতীত আবারও ফিরে পেতে হলে ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার গুণে মুসলমানদের গুণান্বিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।